গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো, গরমে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন baby skin care products

গরমে কিভাবে বাচ্চাদের যত্ন নিবেন? গরমে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন, এছাড়াও গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো ইত্যাদি নানা প্রশ্ন আপনাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন কিভাবে গরমে শিশুর যত্ন নিবেন, গরমে শিশুর জন্য কি কি করনীয় ইত্যাদি সকল বিষয়।

গরমে শিশু বাচ্চাদের নানা ধরনের রোগ বালাই দেখা দেয়। যা শিশুদের শরীরের ভারসাম্য ও শারিরীক-মানসিক সমস্যার সৃস্টি করে। তাই এই গরমে শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়া উচিৎ। সঠিক ভাবে শিশুর যত্ন না নিলে আপনার বাচ্চার বড় ধরনের রোগ বালাই হতে পারে। বর্তমানে প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনেক প্রখর। শিশু থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধ সবাই গরমে অতিষ্ঠ।

বিশেষ করে বাচ্চারা গরমে অসহ্য হয়ে পড়ছে। তাই এই গরমে শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে। সে জন্য শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত দু বেলা পুরো শরীর সুতি কাপর দিয়ে মুছে দিতে হবে। সুতি গামছাও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো, গরমে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন
গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো, গরমে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন

সামনে ঈদে সবাই যার যার বাড়ি ফিরবে। দীর্ঘ ভ্রমণ পথে শিশুরা অতিরিক্ত ঘেমে পানিশুন্যতায় ভোগতে পারে। বাচ্চারা দূর্বল হয়ে যেতে পারে। সঠিক যত্ন না নিলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে। এছাড়া গরমে শিশুর জ্বর, বমি, ডায়রিয়ায় জনির বিভিন্ন রো গ হতে পারে। তাই এই সময় বাচ্চাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে।

গরমে শিশুর যত্নে করনীয় ও বর্জনীয়

  • নিয়মিত পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করানো
  • প্রতিদিন সুতি কাপর দিয়ে দুইবার শরীর মুছে দেওয়া
  • পানিশুন্যতা পুরণে তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, ইত্যাদি খাওয়াতে হবে
  • যেসব বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে, তাদেরকে ঘনঘন দুধ দিতে হবে
  • কৌটা/গুরা দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • শিশুর খাবার বাটি, চামপ, ফিডার ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
  • শিশুকে যে খাবার খাওয়াবে তাকে পরিষ্কার থাকতে হবে
  • বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না। এতে বমি হতে পারে। এবং পানিস্বল্পতা হতে পারে।
  • বাচ্চাকে ঢিলাঢালা, পাতলা কাপর পরাতে হবে।
  • ঘেমে গেলে বারবার মুছে দিতে হবে।
  • শিশুকে ঠান্ডা ঘরে রাখা জরুরী।
  • অতিরিক্ত গরম তাপ তৈরি হয় এমন জায়গায় না যাওয়াই ভাল।
  • পাতলা চাদর বা কাথা গায় দিয়ে ঘুম পাড়ানো ভালো। অতিরিক্ত মোটা জায়গায় না শোয়ানোই ভালো
  • শিশুকে চোখে চোখে রাখতে হবে। যাতে পানিতে না চলে যায়।
  • বাচ্চারা যেন বাহিরের আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয় না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • বাহিরের খাবারে বমি, ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গরমে বাচ্চাদের ত্বকে নানা রোগ ও উপস্বর্গ দেখা দেয়। গরমে বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে তেল মালিশ করা ভালো। তেল মালিশ করে হালকা গরম পানি দিয়ে গা ধুয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোসল বা গামছা দিয়ে মুছে দেওয়া যেতে পারে।

বাচ্চাদের শরীরে বিভিন্ন ভাজ যেমন- গলা, হাটু, ঘাড়, ইত্যাদি জায়গা ভালো করে পরিষ্কার রাখতে হবে। বাচ্চাদেরকে ডায়াপার না পড়ানােই ভালো। এতে শরীরে বাতাস লাগবে, ঘামও কম হবে।

ট্যালকম নামে একটি পাউডার রয়েছে যেটি শিশুর জন্য উপযোগী না। এতে শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষুধ ও পাউডার ব্যবহার করবেন।

গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই বাবা মা ক্রিম ও লোশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। শিশু বাচ্চাদের জন্য ক্রিম বা লোশন সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। একটি ক্রিম বা লোশন বাচ্চার সাথে ফিট বা উপযোগী না হলে বাচ্চার মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। নিচে কিছু ক্রিম ও লোশনের নাম বলা হলো যেগুলো শিশুর জন্য ভালো। তবে প্রত্যেকটি ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ করে ব্যবহার করবেন।

 

  • মামায়ার্থের ময়শ্চারাইজিং লোশন
  • সেমাবেড প্রোটেকটিভ ফেসিয়াল ক্রিম
  • শিয়া বাটার লোশন
  • হিমালয় হারবার বেবি লোশন
  • ময়শ্চারাজইজিং লোশন
  • ইভেনো ময়শ্চারাইজিং লোশন

মামায়ার্থের ময়শ্চারাইজিং লোশন

এই লোশন টি বাচ্চার ত্বককে নরম ও পুষ্টিকর করে তোলে। ত্বকের জ্বালা রোধ করে। প্রায় অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপাদান যেমন- বাদাম তেল , অ্যালোভেরা, শেয়া বাটার, জোজবা তেল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি শিশুর ত্বককে তাজা রাখতে সহায়তা করে।

সেমাবেড প্রোটেকটিভ ফেসিয়াল ক্রিম

শিশুর ত্বকের উন্নতি ও ত্বকের ক্ষতিকর যোগ থেকে রক্ষা করে শিশুর কোমল ত্বকের জন্য আদর্শ। এই ক্রিমটি ত্বককে ময়শ্চারাজই করে এবং ত্বাকের জ্বালা দূর করে।

শিয়া বাটার লোশন

সূক্ষ্ম ত্বকের সুরক্ষা ও ময়শ্চারাইজ করার জন্য এই শিয়া বাটার লোশন। গ্লিসারিন, সূর্যমূখী বীজের তেল , সয়াবিন তেল সমৃদ্ধ এই লোশনটি ছোটদের জন্য উপযুক্ত। এটি পুষ্টিকর ও ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত ত্বককে ময়শ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে।

হিমালয় হারবাল বেবি লোশন

চমৎকার একটি লোশন ছোটদের জন্য। এই লোশনটি শিশুদের ত্বকে পুষ্টি যোগায ও ত্বককে নরম ও শুষ্ক রাখে।  জলপাই ও বাদাম তেল সমৃদ্ধ এই লোশন ত্বককে শীতল ও সতেজ রাখে। তবে এই ক্রিমটি ব্যবহার করলে ত্বকে অ্যলার্জি ও ফসুকুড়ি হয় বলে শোনা যায়।

ময়শ্চারাজইজিং লোশন

অনেকেই শিশুর ত্বকের যত্বে এই ময়শ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করে তাকে। এই লোশনটি হালকা শিশুর ত্বকের জন্য বেশ উপযুক্ত। দুধের প্রোটিন ও অ্যালোভেরা যুক্ত এই লোশনটি শিশুর ত্বককে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আদ্র রাখতে সহায়তা করবে।

এই লোশন টি ত্বককে শান্ত রাখে। ত্বকের ক্ষতি ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ত্বককে মসৃণ ও নরম রাখতে সহায়তা করে।

ইভেনো ময়শ্চারাইজিং লোশন

এই লোশনটি শিশুর সূক্ষ্ম ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপযোগী উপাদান সমৃদ্ধ এই ক্রিমটি শিশুর ত্বককে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আদ্র রাখতে সহায়তা করবে। এটি নিয়মিত বাচ্চাদের ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরমে বাচ্চাদের কি খাওয়ানো উচিত

গরমে খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। কারন অসহ্য গরমে সবাই চায় একটু শান্তি। শীতকালে বাচ্চাদের তেমন রুচি না থাকলেও গরমে বাচ্চাদের সব ধরনের খাবার খেতে দেওয়া উচিৎ নয় । তাই এই সময় বাচ্চাদের পুষ্টিকর ও তাজা খাবার খাওয়ানো উচিৎ। গরমে বাচ্চাদের স্বস্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে যেই খাবারগুলো খাওয়ানো উচিৎ তার একটি ছোট তালিকা তুলে ধরা হলো:-

  • নরম খিচুড়ি বা সবজির স্যুপ
  • তাজা মাছের তরকারি
  • কুসুম গরম পানি
  • বিভিন্ন ফলের সরবত
  • দই জাতীয় খাবার
  • বিভিন্ন মৌসুমি ফল যেমন- আম, জাম, তরমুজ, শসা, পেপে

তবে গরমের সময় বাচ্চাদের ক্ষতি হয় এমন খাবার দিবেন না । এতে হালকা স্বস্তি হলেও বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বাচ্চাদের ক্ষতিকর খাবার যেমন-

  • আইসক্রিম, আইসবার, এই জাতীয় খাবার
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা গরম পানি।
  • কোল্ড ড্রিংকস, জুস এই জাতীয় পানীয়
  • প্যাকেট জাত জুস, গুরো দুধ ইত্যাদি

পরিশেষে

গরমে বাচ্চাদের যত্ন, বাচ্চাদের ত্বকের যত্বে করনীয় ও বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম বা লোশন ভালো হবে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত একটা ধারনা দিলাম। তবে ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিষশজ্ঞের পরমর্শ নিবেন এবং গরমে শিশুর প্রতি এক্সট্রা কেয়ার করবেন।

শিশুরা যেন- অতিরিক্ত রোদে ঘুরাঘুরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর আশে পাশে পুকুর, খাল থাকলে বাচ্চারা যেন পানিতে না নেমে পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *